Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

রিবন রেটিং পদ্ধতি : স্বল্প পানি এলাকায় পাট

রিবন রেটিং পদ্ধতি : স্বল্প পানি এলাকায় পাট পচানোর জন্য লাগসই প্রযুক্তি
ড. এ. টি. এম. মোরশেদ আলম
উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ায় গড়ে উঠা বাংলাদেশের প্রকৃতি ও জলবায়ু পাট চাষের জন্য বেশ উপযোগী। তাই বর্তমানে বাংলাদেশ পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম পাট উৎপাদনকারী দেশ। বিগত কয়েক বছরের পাট আবাদের পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বাংলাদেশে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রায় ৬-৭ লাখ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করা হয়েছে এবং পাট চাষাবাদকৃত উক্ত জমি থেকে প্রায় ৬০-৭০ লাখ বেল পাটের আঁশ পাওয়া যায়। পাট আঁশের গুণগত মান নির্ভর করে এর পচন প্রক্রিয়ার উপর। বাংলাদেশের যে সমস্ত অঞ্চলে প্রচুর পাটের আবাদ হয় অথচ পাট জাগ দেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণ পানি পাওয়া যায় না সে সমস্ত অঞ্চলের জন্য রিবন রেটিং পদ্ধতিই পাট পচানোর জন্য উত্তম ও লাগসই প্রযুক্তি।
পাটের রিবন রেটিং (পাটের ছালকরণ ও পচন) প্রযুক্তি
বাংলাদেশের বেশির ভাগ অঞ্চলে ভালো পাট জন্মে। কিন্তু যথাসময়ে পাট পচনের জন্য প্রয়োজনীয় ও উপযুক্ত পানির অভাবে এ সমস্ত এলাকায় উৎপাদিত পাটের আঁশ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অত্যন্ত নিম্নমানের হয়ে থাকে। পাট আঁশের গুণগত মানের উপরই পাটের বাজার মূল্য নির্ভর করে। আর পাট আঁশের গুণগত মান বহুলাংশে এর পচন প্রক্রিয়ার উপর নির্ভরশীল। এমতাবস্থায় স্বল্প পানি এলাকায় পাট পচন সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করার উদ্দেশ্যে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণার মাধ্যমে বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট স্বল্প পানি এলাকার পাট চাষিদের জন্য রিবন রেটিং (পাটের ছালকরণ ও পচন) প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। এ পদ্ধতিতে পুরো পাট গাছ না পচিয়ে কাঁচা গাছ হতে প্রথমে ছাল বা বাকল ছাড়িয়ে নেয়া হয়। সেই ছাল আগে থেকে তৈরি করা মাটির গর্তে বা চাড়িতে রক্ষিত পানিতে পচানো হয়। এ প্রযুক্তির গোটা প্রক্রিয়া দুটি অংশে বিভক্ত। যথা : ১. পাটের ছালকরণ (রিবনিং), ২. রিবন রেটিং (ছাল পচন)।
পাটের ছালকরণ বা রিবনিং
বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট বহু পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে বাঁশের হুক (ইংরেজি ‘ট’ আকৃতির)-এর সাহায্যে পাটের ছাল ছাড়ানোর জন্য একটি নতুন কৌশল উদ্ভাবন করেছে। এক্ষেত্রে প্রথমিকভাবে ৬ ফুট বা ১৮০ সে. মিটার লম্বা বোরাক বাঁশের যে কোন প্রান্ত ধারালো দায়ের সাহায্যে কোনাকোনিভাবে কেটে বাঁশের হুক তৈরি করে উক্ত হুকের সাহায্যে পাটের গাছ থেকে ছাল পৃথক করা হয়। পৃথককৃত ছালকে বলা হয় রিবন এবং ছাল বা বাকল পৃথক করার প্রক্রিয়াকে রিবনিং বলা হয়।
পরবর্তীতে শক্ত, মজবুত ও দ্রুত কার্যকর লোহার ‘সিঙ্গেল রোলার রিবনার’ এবং ‘ডাবল রোলার রিবনার’ উদ্ভাবন করা হয়েছে। এ সমস্ত ছালকরণ যন্ত্র বা রিবনারের সাহায্যে সহজেই কাঁচা পাট গাছ থেকে ছাল ছাড়ানো যায়।
প্রথমে বাঁশ খ-টির গোড়ার ১ ফুট পরিমাণ অংশ মাটির মধ্যে শক্ত করে পুঁতে দিতে হবে। পাশাপাশি ৩-৪ ফুট বা ৯০-১০০ সেমি. দূরে দূরে প্রয়োজনমতো এরূপ বেশ কয়েকটি বাঁশের হুক স্থাপন করা যেতে পারে।
অতঃপর বাঁশের হুকগুলোর সঙ্গে একটি মুরুলী বাঁশ দিয়ে আড়াআড়িভাবে আড়া বাঁধতে হবে যার উপর পাট গাছ জমি থেকে কেটে এনে দাঁড় করিয়ে রাখা যাবে। পাট গাছগুলো বঁাঁশের আড়ার উপর দাঁড় করানোর পূর্বে যথাসম্ভব হাত দিয়ে পাতা ঝরিয়ে গাছের গোড়ার ৩-৪ ইঞ্চি বা ৮-১০ সেমি. অংশ একটি শক্ত কাঠের হাতুড়ি দিয়ে থেঁতলে নিতে হবে।
প্রতিটি গাছের গোড়ার থেঁতলানো ছালগুলো হাত দিয়ে দুই ভাগ করে পাট গাছের গোড়া হুকের মধ্যে রাখতে হবে। গোড়ার ছালের দুই ভাগ পৃথকভাবে হাতে ধরে একসাথে জোরে টান দিলে দেখা যাবে পাটের ছালগুলো সহজেই পাটখড়ি থেকে আলাদা হয়ে গেছে এবং পাট খড়ি সামনের দিকে চলে গেছে। এভাবে ৪-৫টি পাট গাছের ছাল একসঙ্গে ছাড়ানো সম্ভব। একইভাবে সিঙ্গেল রোলার ও ডাবল রোলার রিবনারের সাহায্যেও পাটের রিবনিং করা যেতে পারে। ছালগুলোকে গোলাকৃতির মোড়া বেঁধে পচানোর জন্য পানিতে জাগ দিতে হবে। সম্প্রতি বিজেআরআই কর্তৃক পাওয়ার জুট রিবনার উদ্ভাবন করা হয়েছে। এতে দ্রুত কম সময়ে ও কম পরিশ্রমে রিবনিং করা যাবে।
রিবন রেটিং প্রক্রিয়া (ছাল পচন)
রিবনিং প্রক্রিয়ায় পৃথককৃত ছাল বা বাকলগুলোকে তিনভাবে পচানো যায়। যথা- ক. বড় মাটির চাড়িতে; খ. পাটক্ষেতের আশে পাশে ছোট ডোবা, পুকুর বা খালে ও গ. মাটির তৈরি গর্তে।
ক. বড় মাটির চাড়িতে ছাল পচন : বড় মাটির চাড়িতে ছালগুলোকে গোলাকার মোড়া বেঁধে সাজিয়ে রেখে পরিষ্কার পানি দিয়ে চাড়িটি ভরে দিতে হবে। একটি বড় চাড়িতে প্রায় ৩০ কেজি ছাল পচানো যায়।
খ. পাট ক্ষেতের আশে পাশে ছোট ডোবা ও পুকুরে ছাল পচন : পাটক্ষেতের আশ পাশে যদি ছোট ডোবা, পুকুর বা খাল বা কম গভীরতা সম্পন্ন জলাশয় থাকে তবে ছালগুলোকে মোড়া বেঁধে একটি লম্বা বাঁশের সংগে  ঝুলিয়ে পানির মধ্যে ডুবিয়ে পচানো যায়।
গ. মাটির তৈরি গর্তে ছাল পচন : প্রতি বিঘা জমিতে উৎপাদিত পাট গাছের কাঁচা ছালের পরিমাণ হয় প্রায় ৩০০০-৪৫০০ কেজি। এ পরিমাণ পাট ছালের জন্য বসতবাড়ির আশ পাশে বা পাট ক্ষেতের পাশে ১০-১২ ফুট দৈর্ঘ্য, ৬-৮ ফুট প্রস্থ এবং         ২-৩ ফুট গভীরতা বিশিষ্ট গর্ত খুঁড়ে গর্তের তলা ও দৈর্ঘ্য-প্রস্থ বরাবর চারিদিকের কিনারা পর্যন্ত পলিথিন দিয়ে ভালোভাবে ঢেকে দিতে হবে। পলিথিনের মাপ অনুযায়ী গর্তের  দৈর্ঘ্য-প্রস্থ-গভীরতা কম বেশি হতে পারে। অতঃপর পরিষ্কার পানি দিয়ে গর্তটি ভরে দিয়ে তারমধ্যে পাটের কাঁচা ছালগুলো মোড়া বাঁধা অবস্থায় ডুবিয়ে দিতে হবে। ছালের ডুবানো মোড়াগুলো কচুরি পানা দিয়ে ঢেকে দিলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
রিবন রেটিং প্রযুক্তিতে কম সময়ে পাটের ছাল পচানোর পদ্ধতি : এ পদ্ধতিতে দুইভাবে পচন সময় কমানো সম্ভব। ১. প্রতি ১০০০ কেজি ওজনের কাঁচা ছালের জন্য ১৫০-২০০ গ্রাম ইউরিয়া সার পচন পানিতে মিশেয়ে দিলে পচন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়। ২. ছোট বালতি বা মাটির হাঁড়িতে ২/১ টা পাট গাছ ছোট ছোট টুকরা করে আগে থেকেই পচিয়ে নিতে হবে। অতঃপর ওই বালতি বা হাঁড়ির পানি ছাল পচানোর জন্য নির্ধারিত চাড়ি বা মাটির গর্তের পানিতে মিশিয়ে দিতে হবে। এর ফলে পানিতে পাট পচনকারী জীবাণুুর দ্রুত বংশবৃদ্ধি হয়ে পচন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হবে এবং কম সময়ে ছালের পচন কাজ সম্পন্ন হবে।
রিবন রেটিং প্রযুক্তিতে ছালের পচন সময় নির্ধারণ করার পদ্ধতি : রিবন রেটিং প্রযুক্তিতে ছাল পচাতে খুব কম সময় লাগে। কাজেই ছাল পানিতে ডুবানের ৭-৮ দিন পর থেকে পচন প্রক্রিয়া পরীক্ষা করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে দুই একটি ছাল পানি থেকে তুলে ভলো করে ধুয়ে দেখতে হবে। যদি পাটের আঁশগুলো পরস্পর ভালোভাবে পৃথক হয়েছে বলে মনে হয়, তবে আর দেরি না করে সাথে সাথে পরিষ্কার পানিতে ছাল ধুয়ে আঁশ সংগ্রহ করতে হবে। এ কথা আমাদের মনে রাখতে হবে যে, পাট আঁশের গুণগত মানের উপরই আঁশের বাজার মূল্য নির্ভর করে।
রিবন রেটিং প্রযুক্তিতে পাটের ছাল পচানোর সুবিধা : ছাল পচানোর জন্য পানি কম লাগে; আঁশে কাটিংস মোটেই হয় না; আঁশের গুণগত মান খুব ভালো হয়, ফলে বাজারমূল্য বেশি পাওয়া যায়; ছাল পচানোর জন্য স্থান ও সময় কম লাগে; পরিবহন খরচ কম হয়; এটি একটি স্বাস্থ্যকর পচন ব্যবস্থা ও এটি অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক পদ্ধতি।
বাংলাদেশের শুষ্ক অঞ্চলসমূহে বিশেষ করে বৃহত্তর যশোর, কুষ্টিয়া, রংপুর, দিনাজপুর, রাজশাহী, বগুড়া, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহের কিছু অংশে উন্নত মানের পাট ফসল উৎপন্ন হয় কিন্তু পচন পানির অপর্যাপ্ততা ও প্রয়োজনীয় পানির অভাবেই উৎপাদিত পাট থেকে যে আঁশ পাওয়া যায় তা প্রায়ই নিম্ন মানের হয়ে থাকে। এখানে উল্লেখ্য, স্বল্প পানি এলাকায় রিবন রেটিং পদ্ধতিতে পাট পচন উৎসাহিত করার জন্য বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের নিজস্ব উদ্যোগে কৃষি মন্ত্রণালয়ের আর্থিক সহায়তায় এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় এ পর্যন্ত প্রায় ৩৩,০০০(তেত্রিশ হাজার) রিবনার দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাটচাষি কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। সুতরাং বাংলাদেশের শুষ্ক অঞ্চল বা স্বল্প পানি এলাকার পাটচাষিগণ বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত রিবন রেটিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে উন্নত মানের পাট আঁশ উৎপাদন করতে সক্ষম হবেন বলে গবেষকগণ মনে করেন। বাংলাদেশের জমির শস্য পর্যায়ক্রমিক চাহিদা, কৃষকদের আর্থসামাজিক অবস্থা ও বহুবিধ প্রয়োজনে বাংলাদেশের মাটিতে পাট চাষ অব্যাহত থাকবে। তাই, এদেশের কৃষক তথা পাট চাষিদের  স্বার্থেই উন্নত পাট পচন প্রযুক্তির মাধ্যমে উন্নত মানের পাটের আঁশ উৎপাদন করে কৃষক তথা দেশের আয় ও সুনাম বৃদ্ধি করা একান্ত প্রয়োজন।

লেখক : মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, পরিকল্পনা, প্রশিক্ষণ ও যোগাযোগ বিভাগ, বিজেআরআই, ঢাকা-১২০৭, মোবাইল : ০১৭৪০-৫৫৯১৫৫। ই-মেইল :morshedbjri@gmail.com


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon